ঢাকা ১৮ আগস্ট ২০২২ :
সম্প্রতি ঢাকার উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের গার্ডার চাপা পড়ে মানুষের মৃত্যুকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, পরামর্শক ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারি সংস্থাসমূহের অবহেলা, উদাসীনতা ও গাফিলতিজনিত হত্যাকান্ড বলে মনে করে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
আমাদের নগরসমূহের বাসযোগ্যতা নিয়ে বহুল আলোচনা আছে; কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য নগরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন নেই, ঠিক তেমনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবার প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় উদ্যোগগুলো বহুলাংশে অনুপস্থিত। ফলে রাজপথে, ভবনে কিংবা নগরের যে কোন স্থানে আমাদের নাগরিকদের বেঘোরে প্রাণ হারাতে হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারাদেশেই অবকাঠামোগত বৃহৎ প্রকল্পসহ নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জননিরাপত্তা ও জনভোগান্তি নিয়ে ইতিপূর্বে বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনা ঘটেছিল যাতে সাধারণ মানুষের জান-মালের বিবিধ রকমের ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছিল।
প্রকল্প দলিল ও সরকারের নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনে নির্মাণকালীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে করণীয়সমূহ সু্নির্ধারিত থাকা সত্বেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারী সংস্থাসমূহের প্রত্যেকেই এই ব্যাপারে দিনের পর দিন উদাসীনতা ও গাফিলতি দেখিয়ে যাচ্ছেন, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ঠিকাদারসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও পেশাজীবিরা মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং আইনের বিধান ও প্রকল্পের কার্যাদেশের শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালনে দিনের পর দিন বেপরোয়া মনোভাব দেখিয়েই চলেছেন। এই ধরনের ঘটনাকে কোনভাবেই দূর্ঘটনা বলবার সুযোগ নেই, বরং এই সব বেপরোয়া ঘটনাসমূহ সুস্পষ্টভাবেই গাফিলতি ও অবহেলাজনিত হত্যাকান্ড।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে গার্ডার পরে মানুষের মৃত্যুসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ নিরাপত্তা জনিত অবহেলার কারণে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। বিআরটি প্রকল্পেই গত বছরের শুরুতে ঘটে যাওয়া গার্ডার দূর্ঘটনাসমূহের বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবিধান করলে এই ধরনের বেপরোয়া ঘটনায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু এড়ানো যেত বলে মনে করে আইপিডি।
এক্ষেত্রে গার্ডার দূর্ঘটনার দায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসহ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, সেতু কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কোনভাবেই এড়াতে পারে না।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ২০১২ সালে গার্ডার ধ্বসে ১৩ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনার এক দশক পার হতে চললেও তার কোন সুষ্ঠূ বিচার হয়নি। আইপিডি মনে করে, উক্ত ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হলে বিআরটি প্রকল্পের অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত।
এভাবেই দিনের পর দিন রাষ্ট্র ও সরকার দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি চালু করেছে, তার মাধ্যমেই ঠিকাদার কোম্পানি, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে অবজ্ঞা করবার সুযোগ অবলীলায় পেয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক উত্তরায় বিআরটি’র গার্ডার ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনাতেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উপর পুরো দায়ের ভাগ দিয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির প্রচেষ্টা চলছে।
এমনকি এত বড় হত্যাকাণ্ডের পরও জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের প্রকল্পের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখবার নির্দেশনা সত্বেও যথাযথ নির্মাণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণভাবে বিআরটি প্রকল্পের কাজ এখনো বিভিন্ন জায়গায় চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এত বড় ঘটনার পরও সংশ্লিষ্ট সকলের বোধোদয় হয়নি।
আইপিডি মনে করে, নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কোন কাজে অবহেলাসৃষ্ট ঘটনাসমূহের সুস্পষ্ট তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের গাফিলতি যথাযথভাবে চিহ্নিত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করা হলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ একেবারেই অসম্ভব।
এটা না করা গেলে সাধারণ জনগণ ও নির্মাণ শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কোনভাবেই সম্ভব হবেনা।
বিদ্যমান বাস্তবতায় সাধারণ জনগণ ও নির্মাণশ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইপিডি’র দেয়া নিম্নের সুপারিশসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজনঃ
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) মনে করে, আমাদের নগর এলাকাসহ সর্বত্র সাধারণ জনগণের জীবন ও চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব, যাকে অবহেলা করবার কোন সুযোগ নেই। সারা দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো, ভবন নির্মাণসহ সকল নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবার প্রয়োজনে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের যথাযথ তদারকি করতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগসমূহ অতি দ্রুত নেবার জোর দাবী জানাচ্ছে আইপিডি।