জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাণী
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ঢাকা ২৩ জুলাই ২০২২ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ২৪ জুলাই ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“প্রতিবছরের মতো এবারও জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি দেশের মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবীসহ মৎস্যখাত সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণের পুষ্টি চাহিদা পুরণ, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হিসেবে মৎস্যখাতকে চিহ্নিত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার সকলের অংশগ্রহণে মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য আজ সর্বজনবিদিত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৫ম, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাসিয়া উৎপাদনে ৮ম এবং ফিনফিস উৎপাদনে ১২তম স্থান অধিকার করেছে। ইলিশ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১ম, তেলাপিয়া উৎপাদনে বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য়।
‘রূপকল্প-২০৪১’ অর্জনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ একটি অপার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতির সর্বোচ্চ আহরণ মাত্রা নির্ধারণ করে সমুদ্র মৎস্য সম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গবেষণা ও জরিপ জাহাজ ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ কর্তৃক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া লং লাইনার ও পার্সসেইনার নৌযানের মাধ্যমে একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক জলসীমায় টুনা এবং সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সামুদ্রিক জলসীমায় অবৈধ, অনুল্লিখিত এবং অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ নিয়ন্ত্রণ, মৎস্য সম্পদের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার নৌকায় ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম ও অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্যের মজুদ নিরুপণ, তার যথাযথ সংরক্ষণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ একটি নবায়নযোগ্য সম্পদ, যার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর মৎস্য পণ্য নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার বদ্ধপরিকর। সুস্থ-সবল ও মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে নিরাপদ আমিষের অবদান অনস্বীকার্য। এ লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশা করি, বিপুল সম্ভাবনাময় এ মৎস্যখাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলে আরো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবেন।
আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আজীবন স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’।
আমি ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বাণী
ঢাকা ২৩ জুলাই ২০২২ :
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আগামীকাল ২৪ জুলাই ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষ্যে আমি দেশের সকল মৎস্যচাষি, মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, মৎস্য সম্প্রসারণকর্মী ও মৎস্য বিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এবারের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
‘মাছে ভাতে বাঙালি’- এ শাশ্বত পরিচয়েই নিহিত রয়েছে আমাদের জাতীয় জীবনে মৎস্য খাতের গুরুত্ব। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে মৎস্য সেক্টরের ভূমিকা অপরিসীম। সরকার মৎস্যখাতের অপার সম্ভাবনা ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এর উন্নয়নে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। মৎস্যখাতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মৎস্যচাষকে যান্ত্রিকীকরণ ও নিবিড়করণের মাধ্যমে খামারের উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় প্রজাতির ছোটো মাছসহ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজাতির প্রাচুর্য রক্ষায় উন্মুক্ত জলাশয়ের পরিবেশ উন্নয়নসহ জলজ দূষণ রোধকল্পে আরো কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। উম্মুক্ত জলাশয়ের টেকসই সংরক্ষণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা এবং বদ্ধ জলাশয়ে উন্নত প্রযুক্তির মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ ও মৎস্যচাষিদের লাগসই প্রশিক্ষণসহ সুপরিকল্পিত উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণের ফলে দেশ আজ মৎস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এছাড়া আমাদের বিশাল সমুদ্র এলাকায় ব্লু-ইকোনমির অবারিত সুযোগকে কাজে লাগাতে সামুদ্রিক মৎস্যের ধারাবাহিক মজুদ নিরূপণ, সংরক্ষণ ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে পোনা মাছ অবমুক্ত করে মৎস্য উৎপাদনে সামাজিক আন্দোলনের শুভ সূচনা করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে মৎস্যখাতের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্ট সকলে নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার সাথে কাজ করবেন – এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
আমি ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”