ড্যাপ ২০২২-২০৩৫ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের দাবী বিআইপির
ঢাকা ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ :
অদ্য ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ (শনিবার), দুপুর ২.৩০ টায় ঢাকাস্থ প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর উদ্যোগে গেজেটভুক্ত ঢাকা মহানগর এলাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২-২০৩৫’ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নঃ ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত রাষ্ট্র গঠনের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বিআইপি’র দাবী শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর যুগ্ম সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবির এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট এর সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. শফিক-উর রহমান, কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. মু. মুসলেহ উদ্দীন হাসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ তামজিদুল ইসলাম, পরিকল্পনাবিদ মোঃ রেজাউর রহমান ও পরিকল্পনাবিদ হামিদুল হাসান নবীন। একইসাথে উপস্থিত ছিলেন বিআইপি উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ এবং উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য পরিকল্পনাবিদ শওকত আলী খান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর পক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট এর সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন। প্রতিবেদনের শুরুতেই তিনি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫ এর গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাসমূহের উপর আলোকপাত করেনঃ
তিনি বলেন, এ পরিকল্পনায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ক্ষতি না করে একমূখী ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিত মিশ্র ভূমি ব্যবহারের জন্য কিছু নির্দেশনা সুপারিশ করা হয়েছে। ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আবাসিক, বাণিজ্যিক, ও শিল্প এলাকাসহ, কৃষি, প্রাতিষ্ঠানিক, জলাশয়, বনাঞ্চল, উন্মুক্ত স্থান, যোগাযোগ, বন্যা প্রবাহ ইত্যাদি এলাকাসমূহ পরিকল্পনায় সুষ্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পূর্বোক্ত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ কে অকার্যকর এবং শহরের অবস্থা ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূন্য নয় মন্তব্য করে, ঢাকা শহরে জনসংখ্যার চাপ কমানো ও ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করে তোলার জন্যে “বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ২০২২-২০৩৫” তে জনঘনত্ব বিন্যাস পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পরিকল্পনায় ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৪০% নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর সুলভ আবাসনের (Affordable Housing) সংস্থানে এবং সংজ্ঞায়ন ও বিধি-বিধানে কিছু পরিমার্জন এবং নিম্নবিত্তের আবাসনের ব্যবস্থার বিপরীতে প্রণোদনা FAR দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্তের সাশ্রয়ী আবাসন ব্যবস্থার লক্ষ্যে উক্ত পরিকল্পনায় আয়তন সহ ৫৮ টি লোকেশন চিহ্নিত করে মোট এক লক্ষ আবাসিক ইউনিট নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নগর এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম জায়গায় সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে প্লট ভিত্তিক উন্নয়নের পরিবর্তে নির্দিষ্ট এলাকায় ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন পদ্ধতির সুপারিশ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা এবং অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট প্লট একত্রীকরণের ফলে একদিকে যেমন বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে জমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও কমে যাবে। তাছাড়া, যত্রতত্র নগরাঞ্চল এর সম্প্রসারণ কমিয়ে আনা এবং শহরের নিচু জমি ও কৃষি জমির সুরক্ষা করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। ব্লকভিত্তিক আবাসনের জন্য কিছু সম্ভাব্য এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে যেমন,
সড়কপথের পাশাপাশি উপেক্ষিত জলপথকে গুরুত্ব দিয়ে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় নদী, খালসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ে সমন্বয়ে ৩২০৭ কিলোমিটার নগর জীবনরেখা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে ২১৯৮ কিলোমিটার সড়কপথ এবং ৫৭৪ কিলোমিটার নৌ-চলাচলের উপযোগী নৌপথ উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা এবং রাজউকের সমস্ত খাল উন্নয়ন প্রকল্প সুপারিশ করা হয়েছে যা দখলমুক্ত এবং সংস্কার করে নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি, ঢাকার সাথে আশপাশের শহরগুলোকে যুক্ত ও যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ৬ টি মেট্রো, ২ টি বিআরটি, ৬ টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের সমান্তরালে ২ টি প্রধান সড়ক, ২টি রিং রোড, রিং রোডের সাথে সংযুক্ত রেডিয়াল রোড, এবং বৃত্তাকার নৌপথের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকার চারদিকে মোট ১৩ টি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং ২টি ট্রাক টার্মিনালের প্রস্তাব করা হয়েছে। মেট্রো স্টেশন, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল বা নদীবন্দরকে কেন্দ্র করে এর সংলগ্ন এলাকা মূলত ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন (Transit Oriented Development/TOD) এলাকা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি, এই বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় পথচারী ও অযান্ত্রিক যান চলাচলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিস্তারিত নির্দেশনাসহ অগ্রাধিকারমূলকভাবে ২০২ কিলোমিটার সাইকেল লেন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
অধিকন্তু, School District Concept কাজে লাগিয়ে প্রতিটি এলাকার উন্নয়নে এবং যানজট নিরসনে অঞ্চলভিত্তিক মানসম্মত ৬২৭ টি বিদ্যালয় ২৮৫ টি কলেজ এবং একইসাথে ২৮৭ টি হাসপাতালের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভৌত জরিপ থেকে দেখা যায়, ঢাকার উন্মুক্ত স্থান এর পরিমাণ মোট এলাকার মাত্র ০.৯ শতাংশ। পরিবেশবান্ধব শহর তৈরীর লক্ষ্যে এ পরিকল্পনায় ৫ টি বৃহৎ আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫ টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪ টি বৃহৎ ইকোপার্ক (ভাওয়াল বনসহ) এবং খেলার মাঠ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও, প্লাবনভূমি এলাকাকে বিচ্ছিন্ন স্বত্বা না ভেবে বরঞ্চ পানি এবং ভূমির সাথে একটি সম্পর্ক তৈরীর লক্ষ্যে বিশেষ শর্তসাপেক্ষে শুধু সাধারন জলস্রোত এলাকায় স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে মুখ্য জলস্রোত এলাকায় ভূমিতল উন্নতিকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থাপনা, কৃষিজমি, বন্যাপ্রবণ অঞ্চল বা সংবেদনশীল এলাকা সংরক্ষণের জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময় পদ্ধতি (Transfer of Development Rights, TDR) সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়াও, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিকেন্দ্রীভূত ও এলাকাভিত্তিক (Community based) কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনঃচক্রায়ন (Recycling) 3R পদ্ধতি সুপারিশ করা হয়েছে। জনমানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী পুরাতন ঢাকায় বিদ্যমান রাসায়নিক গুদামসমূহ পর্যায়ক্রমে হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনায় তালিকাভুক্ত KPI এবং Heritage Zone এর অবস্থান চিহ্নিত করে এর বলয় এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা সংরক্ষণ করে পর্যটন এবং বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে বিআইপি’র সভাপতি মন্তব্য করেন।
পরিকল্পনাবিদ সুমন বলেন, এবারের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় জনঘনত্ব পরিকল্পনা, কমিউনিটি পরিসেবা, পথচারীবান্ধব পরিকল্পনা, পরিবেশ সংরক্ষণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ স্থান পেয়েছে। বৈশ্বিক শহরগুলোর পরিকল্পনায় এ বিষয় সমূহ গুরুত্বের সাথে বিচার করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও বাংলাদেশের শহরগুলোর পরিকল্পনায় এ বিষয় সমূহ ইতিপূর্বে যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। এই বাস্তবতায় এবারের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় শহরের টেকসই উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও বাসযোগ্যতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে বিআইপি বিশ্বাস করে।
বিআইপি’র সভাপতি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা (STP, RSTP, DAP 2010) প্রণয়ন করা হলেও সেটার সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়সমূহ উচ্চতর পরিকল্পনা এবং কর্মকৌশল অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মত উন্নয়ন করেছে। এভাবে পরিকল্পনা গুলোর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঢাকা শহরের বর্তমানের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, পূর্বের ড্যাপে ভূমি ব্যবহার এবং অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধাদির প্রস্তাবনা সমন্বিত হলেও পরিকল্পনাটি মূলত ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের জন্য জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ মনোযোগী হতে দেখা যায়নি। ড্যাপ এর প্রস্তাবিত অবকাঠামো বাস্তবায়নে তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যা শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নকে একদিকে যেমন বাধাগ্রস্ত করেছে, অন্যদিকে ড্যাপের নির্দেশনা না মেনে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর দিনকে দিন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে এই পরিকল্পনাবিদ মন্তব্য করেন।
ড্যাপ ২০১০ বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিআইপি’র প্রেসিডেন্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ এবং কার্যকরী উদ্যোগের অভাব, অনুনোমোদিত নির্মাণ রোধে আইনের দুর্বল প্রয়োগ, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্পদের সীমাবদ্ধতা, প্রণীত পরিকল্পনা প্রতিবেদন এবং প্রণয়নকৃত নকশার ব্যাপক প্রচারে উদ্যোগের অভাব, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় উদ্যোগের অভাব এবং নগরের আর্থ সামাজিক বাস্তবতার সাপেক্ষে পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত নীতিকৌশলের কিছু অসামঞ্জস্যতার কথা উল্লেখ করেন।
তথাপি বর্তমান ড্যাপে, এই প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার জন্য কোন ধরনের পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়াও এই পরিকল্পনার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিবেচ্য বিষয় হলো বন্যা প্রবাহ এবং উপ-বন্যা প্রবাহ অঞ্চলে অবৈধ আবাসন উন্নয়নের সমাধান না করা এবং পরিবেশ অবান্ধব কর্মকাণ্ডের বৈধকরণের পরিবর্তে কোনও ধরনের জরিমানা বিধানও না করা। উপরন্ত, ঢাকা নগরীতে ট্রাই সাইকেল বা রিক্সা একটি অন্যতম বহুল ব্যবহৃত বাহন হলেও অযান্ত্রিক যান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় সেটি বিবেচিত হয়নি। পূর্বে ড্যাপ ২০১০ এর কত শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, বা কেন হয়নি এই সম্পর্কে কোন পুনঃ মূল্যায়নকৃত তথ্য এই পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়নি।
বর্তমান ড্যাপের মেয়াদকাল ২০১৬-২০৩৫ হলেও ২০২২ সালে এসে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময়কাল কম। সরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে প্রতি ৫ বছর পর পর তথ্য হালনাগাদকরণের পাশাপাশি অবিলম্বে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জুরুরী। বিআইপি প্রত্যাশা করে সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের এই পরিকল্পনার কর্ম কৌশল অনুযায়ী নিজেদের কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করবে এবং এই পরিকল্পনার বাহিরে যেন কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহন না করা হয়, সেজন্য বিআইপি জোরালো দাবি জানায়। এই লক্ষ্যে ড্যাপের সঠিক বাস্তবায়নে সরকারের যেকোন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প গ্রহণ, প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পূর্বে রাজউক থেকে প্রকল্পের সাথে ড্যাপের ‘সামঞ্জস্যতা ছাড়পত্র’ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। এবং পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। সর্বোপরি, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজউকের যে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রয়োজন তা বর্তমানে অনুপস্থিত। তাই ড্যাপের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য রাজউকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হবে।
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫ বাস্তবায়নের জন্য রাজউকের কি ধরনের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় সাধনের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।
ব্লকভিত্তিক আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে ভাড়া বৃদ্ধি পাবে কি না এই জবাবে পরিকল্পনাবিদ ড. মু. মুসলেহ উদ্দিন হাসান জানান যে, ঢাকার ভবনের পরিসংখ্যান উল্লেখপূর্বক ভবনের উচ্চতা বাড়লে পার্শ্ববর্তী এলাকায় আবাসন সংকট হবেনা, সেক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগ নেই। এই পরিকল্পনা পরিপুর্ণভাবে বাস্তবায়নে নির্দেশনা সমন্ধে জানতে চাইলে পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন বলেন পুর্বের ড্যাপের তুলনায় বর্তমান ড্যাপে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও বিধিবিধান অধ্যায়ে সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়নের দিক নির্দেশনা উল্লেখ রয়েছে।
পরিকল্পনাবিদ শওকত আলী খান ড্যাপ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সহযোগিতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নৌপথ ও সড়কপথের সমন্বয় সাধন সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনাবিদ ড. মু. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন যে, গেজেটভুক্ত ড্যাপে নৌপথ ও সড়কপথের সমন্বয় সাধন করে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হয়েছে, এক্ষেত্রে এ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের উক্ত ভূমি ব্যবহারের সাথে সঙ্গতি রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।
সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে, বিআইপি’র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চস্তর পরিকল্পনা এবং পলিসি পেপার অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে গড়ে হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে উপযুক্ত জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। পরিকল্পনার উপরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার নির্দেশনায় সূচনা হয়েছিল ন্যাশনাল ফিজিক্যাল প্ল্যান প্রণয়ন কর্মসূচী। কালের বিবর্তনে সেই পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা মাফিক দেশ পরিচালিত হয়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায়ও পরিকল্পনার গুরুত্ব সুস্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন মহাপরিকল্পনা ছাড়া কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাবে না। এমতাবস্থায়, ২০৪১ সালের উন্নত রাষ্ট্র গঠনের রোড ম্যাপে ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরী।
সুতরাং বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাজউক-কে বেশি মনোযোগী হতে হবে বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা পরামর্শক পরিকল্পনাবিদ তৌফিক মহিউদ্দীন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ পরিকল্পনাবিদ মোঃ আনিসুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম মঈনুদ্দীন এবং সহযোগী অধ্যাপক ড. মেহেদী হাসান, সুশাসন বিশেষজ্ঞ পরিকল্পনাবিদ মনোয়ার সোহেল জিআইজেড বাংলাদেশ এর কর্মকর্তা পরিকল্পনাবিদ এনামুল হক, পরিকল্পনাবিদ আবু তাহের প্রমুখ।
পরিশেষে, সংবাদ সম্মেলন এর সঞ্চালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ রাসেল কবির পরিকল্পিত রাজধানী গড়ে তুলতে এবং এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) রাজউক তথা বাংলাদেশ সরকারকে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধ পরিকর মন্তব্য করে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।