নদী রক্ষা না করতে পারলে নদীমাতৃক দেশকে রক্ষা করা যাবে না : শরীফ জামিল
ঢাকা ২৫ জুলাই ২০২২ :
নদীদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শিরোনামে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী নদী কথন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২৫ জুলাই সোমবার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের আয়োজনে “নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব” শীর্ষক সপ্তম নদীকথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২:০০ টায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী বসিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে এই নদীকথন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
দূষণবিরোধী একটি শক্তিশালী প্রচেষ্টা তৈরির উদ্দেশ্যে ইউএসএআইডি এবং কাউন্টারপাট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ (বিপিআই) এর অন্তর্ভূক্ত সংগঠন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় নদী দূষণ রোধে পরিচালিত এই রিভার টকি/নদীকথনে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক জনাব শরীফ জামিল এর সঞ্চালনায় “নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, প্রাক্তন আঞ্চলিক উপদেষ্টা, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস, প্রাক্তন পরিচালক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ; অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, মন্দিরা গুহ নিয়োগী, প্রকল্প ব্যবস্থাপক,পলিসি এন্ড ফুড সিস্টেম এট গ্লোবাল এলাইন্স ফর ইমপ্রুভড নিওট্রিশন, শাহীনুর আক্তার, সার্র্ভিস প্রমোটর, নারী মৈত্রী, মাইনউদ্দীন আহম্মেদ, চিফ অব পার্টি, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল, নদীপাড়ের কম্যুনিটির প্রতিনিধি মোহম্মদ মানিক হোসেন ।
এছাড়াও নদীদূষণ রোধে কাজ করেন এরকম স্থানীয় কমিউনিটি র্ভিত্তিক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সপ্তম নদীকথন অনুষ্ঠানটি ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ www.facebook.com/waterkeepersbangladesh; এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর পার প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত পার অনলাইন প্লাটফরম ফর সিএসও এর ফেসবুক গ্রুপ https://www.facebook.com/groups/210635139965490 থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
নদীকথনে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, একটা দেশের সম্পদ হলো নদী এবং নদীর সাথে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক দিক থেকে সম্পর্কিত। তবে এই নদী বিভিন্নভাবে দূষিত হচ্ছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই নদীকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে নদীকে যেমন রক্ষা করা যাবে ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যগত সমস্যারও সসমাধান করা সম্ভব হবে। আমাদের নদী রক্ষা না করতে পারলে আমাদের নদীমাতৃক দেশকে রক্ষা করা যাবেনা। আর আমাদের দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকাকে বাঁচাতে হলে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে।
শাহীনুর আক্তার তার বক্তব্যে বলেন, আমরা নদীপাড়ের এলাকার জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরীতে কাজ করে থাকি। আমাদের উঠান বৈঠক কার্যক্রমে পরিবেশ রক্ষা বিশেষ করে নদী দুষণ রোধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে এলাকার জনগনের সচেতনতার জন্য আমরা কাজ করব কারণ সরকারের পাশাপাশি জনগনের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী। নদীতে পলিথিন ফেলা যাবেনা, প্লাষ্টিক বোতল ফেলা যাবেনা, চিপস্ এর প্যাকেট ফেলা যাবেনা এই বিষয়গুলো জনগনকে জানানো অত্যন্ত প্রয়োজন।’
অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর বলেন, নদী দূষণ ও জনস্বাস্থ্যে এর প্রভাব বিষয়ে বিভিন্ন সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে এবং গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল নদী দুষণ বিরোধী নীতি প্রনয়ন ও সংস্কারের জন্য এ্যাডভোকেসির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। ত্ছাাড়া দূষণ বিরোধী চলমান যে কার্যক্রম আছে সেগুলো জোড়ালোভাবে পরিবীক্ষণ করা হলে নদী দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।
নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রসঙ্গে ডাঃ আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন যে, নদী দূষণ অর্থাৎ নদীর পানি দূষণ হয় রাসায়নিক পদার্থ থেকে এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক পানিতে মিশে, এই দূষিত পানি পান করার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে প্রজননতন্ত্র পর্যন্ত ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয় কিডনী এবং যকৃৎ। শিশুদের হাঁপনী, হৃদপিন্ড, শরিরীক প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগ হয়। তাই কোন্ কোন্ সময় কি পরিমানে ও কোন খাত থেকে এই রাসায়নিক ও কীটনাশক পানিতে নির্গত হয় তা গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনা এবং সে অনুযায়ী নদী দূষণ রোধে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব প্রসঙ্গে মন্দিরা গুহ নিয়োগী বলেন, নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারনে তা খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে চলে আসে তখন তা শিশুদের শারিরীক প্রতিবন্ধকতা এবং অপুষ্টির সমস্যা তৈরী করে। তাই নদী দূষণ রোধে জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরী।
“নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব” শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই নদীকথনে অংশগ্রহণকারীগণ অভিযোগ করেন, যদিও এখন নদীর পানি পরিস্কার কিন্ত পানি দূষিত। এই দূষিত পানি পান করার কারণে মানুষের অনেক ধরনের পানিবাহিত রোগ হচ্ছে এবং শারিরীক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। নদীকে বাঁচানোর আন্দোলনে সকলে একসাথে কাজ করার জন্য অংশগ্রহণকারীগণ অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এই নদীকথনের ধারাবাহিক আয়োজন করে নদীর বিভিন্ন রকম সমস্যা চিহ্নিত করে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে যাবে।
পাশাপাশি দেশের অন্যন্য নদী অববাহিকায় মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নদী থেকে নদীর সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরার বিষয়ে উৎসাহিত করা নদীকথন আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
উল্লেখ্য, আজকের “নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব” শীর্ষক নদী কথন অনুষ্ঠানটি ওয়াটারকিপার্স কনসোর্টিয়ামের আয়োজনে ৭ম নদীকথন।