বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির বাণী
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
ঢাকা ৬ আগস্ট ২০২২ :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২২’ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২২’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘Step up for Breastfeeding, Education and Support’ অর্থাৎ ‘মায়ের দুধ পান: শিক্ষা ও সমর্থনের পদক্ষেপ’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। মাতৃদুগ্ধপান শিশুদের পুষ্টিপূরণ এবং সম্মিলিত শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়।
একটি সুস্থ ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি এবং মাতৃ ও শিশু পুষ্টি উন্নয়নের কার্যক্রম টেকসই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ ৬ মাসে উন্নীত করেছি। সাধারণভাবে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। প্রতিবছর শিশু অপুষ্টির হার ১.২৭ শতাংশ কমেছে। Sustainable Development Goal (SDG)-3 শিশু সম্পর্কিত সূচকগুলো, যথা- ৫ বছর বয়সের নিচে শিশু মৃত্যুহার ৩১ এবং নবজাতকের মৃত্যুহার ১৭ ইতোমধ্যেই মাইলফলক অতিক্রম করেছে সময়ের আগে। SDG-2 এর শিশু সম্পর্কিত সূচকগুলো, যথা কৃশকায় শিশুর হার ৮% এ দাঁড়িয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের খুব কাছাকাছি রয়েছে। SDG-2 এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে খর্বাকৃতি শিশুর হার ৩১% থেকে ২৫% এ এবং কম ওজনের জন্ম নেয়া শিশুর হার ২২% থেকে ২০% এ কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের শতকরা ৬৫ ভাগ শিশু ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খায়। World Breastfeeding Trends Initiative (WBTi) এর প্রতিবেদন, ২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশ ৯৭টি দেশের মধ্যে ৯১.৫/১০০ স্কোর পেয়ে সারা বিশ্বে ১ম স্থান অধিকার করে গ্রীন জোন এ আছে। গুঁড়াদুধের বিপণন নিয়ন্ত্রণে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি বিপণন নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১৩ এবং এর বিধিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা International Baby Food Action Network (IBFAN)-2018 এর প্রতিবেদন State of the code by country অনুযায়ী মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য এবং উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইন)-২০১৩ ১ম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
আমরা সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, রেলস্টেশন সব জায়গায় ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে, চিড়িয়াখানায়, বিভিন্ন রেলস্টেশনে, শপিং মলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করেছি। এছাড়াও হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলোতে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪র্থ সেক্টর হেল্থ, নিউট্রিশন ও পপুলেশন প্রোগ্রাম এবং ২য় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনার আওতায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টিসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে মা ও শিশুর পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে মা সহায়ক দলের (Mother Support Group-MSG) প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আমি আশা করি, অতি শীঘ্রই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা মাতৃ ও শিশু পুষ্টি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা SDG অর্জন করব। আমি দেশের সর্বস্তরের শিশুকে ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ পান করানো, ৬ মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়ানো এবং ২ বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যাওয়ার অগ্রগতির ধারাকে জোরদার করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পুষ্টিসেবা ও বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) সহ সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আমি ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২২’- উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির বাণী
ঢাকা ৬ আগস্ট ২০২২ :
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২২’ উদ্যাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ বছরের বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘Step up for Breastfeeding, Education and Support’ অর্থাৎ ‘মাতৃদুগ্ধ পান এগিয়ে নিতে, শিক্ষা ও সহযোগিতা হবে বাড়াতে’ অত্যন্ত যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
মায়ের দুধ শিশুর সর্বোত্তম খাবার। মায়ের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মা ও শিশুর মধ্যে দৃঢ় বর্ন্ধন সৃষ্টি করতে সহায়তা করে। নবজাত শিশুর যথাযথ বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে তাকে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের শাল দুধ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫% এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এই হার ৭০% এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিয়মিত প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মায়েদের উদ্বুদ্ধকরণেও উদ্যোগী হতে হবে।
শিশুর সুষ্ঠু শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। শিশুদের বাজারে প্রচলিত বিকল্প শিশুখাদ্য প্রদানের ক্ষেত্রেও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাতৃদুগ্ধের বিকল্প খাদ্যের প্রচারণা নিয়ন্ত্রণে সরকার ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ ও এ সংক্রান্ত বিধিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশায় নারীর অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সরকার শিশুকে সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানোর নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য ছয় মাস বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান করেছে। আমি আশা করি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এ বিধান প্রতিপালনে আরো যত্নশীল হবে। দেশে মাতৃদুগ্ধ প্রদানের হার বাড়াতে পরিবারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও নারীকে মাতৃদুগ্ধ দানে সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরি। শিশুকে সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়াতে পারিবারিক সহায়তার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্মক্ষেত্রে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করবে- এ প্রত্যাশা করছি।
আমি ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২২’ উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”