শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন অপেক্ষা জনসচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ
ঢাকা ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ :
যে কোন পরিবেশগত সমস্যা বিশেষ করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন অপেক্ষা জনসচেতনতা, ইইতিবাচক মানসিকতা ও নৈতিক আচরণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের নৈতিক শিক্ষা প্রসারে ইমামসাহেবগণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং জুম্মার নামাজের সময় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শব্দদূষণ বিষয়ে আলোচনার আহবান জানান।
পাশাপাশি পরিবহন চালকগণ সচেতন হলে শব্দদূষণ বহুলাংশে কমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ইমাম সাহেব ও পরিবহণ চালকদের ভূমিকা বিষয়ে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অডিটোরিয়ামে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণে উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ মামুনুর রশীদ।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগরের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আসাদুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজার সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলী এহ্সান, বিআরটিএ কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক জনাব উথোয়াইনু চৌধুরী এবং ইমাম সমিতির সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্যে প্রশিক্ষণের শুরুতে প্রশিক্ষণের লক্ষ্য উদ্দেশ্যসহ প্রকল্পের সার্বিক বিয়য় তুলে ধরেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হুদা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, যদিও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ২০০৬ সালে আইন হয়েছে কিন্তু আমরা এ বিষয়ে তেমন সচেতন নই। আইন মানতে কেউ আগ্রহী নই। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কোন সফলতা আসবে না। তাই সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে আলোচনা করেন কক্সবাজার সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলী এহ্সান। তিনি বলেন, শব্দদূষণ কানের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিস্ককে আঘাত হানে ফলে দীর্ঘ মেয়াদে মানুষ বধীর হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণ হচ্ছে শব্দদূষণ। ফলে সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য তিনি আহবান করেন।
বিআরটিএ কক্সবাজার জেলার সহকারী পরিচালক জনাব উথোয়াইনু চৌধুরী বলেন, লাইসেন্স নবায়নের সময় ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণে শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতন করা হয় এবং বিনা কারণে হর্ণ না বাজাতে উৎসাহিত করা হয় মর্মে সবাইকে অবহিত করেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার সভাপতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগরের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ আসাদুল হক উপস্থিত সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, কক্সবাজার জেলাকে শব্দদূষণমুক্ত করতে সচেতন হতে হবে এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আসে, সুতরাং দেশের ভাবমূর্তী উজ্জল করতে কক্সবাজারে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সম্বিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীগণ বেশ কিছু সুপারিশ ও প্রতিশ্রতি করেন। ১) শব্দদূষণ বিষয়ে প্রচারণার জন্য লিফলেট বিলি করা, ২) জুম্মার নামাজের খুতবার সময় শব্দদূষণ বিষয়ে আলোচনা করার ইমাম সাহেবগণ প্রতিশ্রতি প্রদান করেন, ৩) পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ইমাম সমিতির সভাপতি বরারবর চিঠির মাধ্যমে শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করার অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করা হয়, ৪) জেলা অটো বাইক মালিক সমিতি ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি তাদের অন্তর্ভূক্ত করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানান, ৫) উপস্থিত ড্রাইভারগণ বিনা কারণে হর্ণ বাজাবেন না মর্মে শপথ করেন। অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, ইমাম সমিতির সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা অটো বাইক মালিক সমিতির সভাপতি জনাব রিয়াজ মোর্শেদ, মাওলানা আখতার হোসেন প্রমুখ।