ইসলামের জন্য শেখ হাসিনার সরকার যে কাজ করেছে, অন্য কেউ তা করেনি : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী
ঢাকা, ৫ ভাদ্র (২০ আগস্ট):
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘দেশে ইসলামের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার যে কাজ করেছে, অন্য কোনো সরকার তা করেনি। শুধু মুখে ইসলামের কথা বলে ফায়দা লুটা বিএনপি-জামাতসহ ইসলামের লেবাস ধরে যারা ইসলাম ও দেশের ক্ষতি করতে চায়, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
আজ রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ইউনাইটেড ইসলামি পার্টির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও তাঁদের পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ড. হাছান বলেন, দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করার পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। যে দেশীয় অপশক্তি স্বাধীনতা চায়নি এবং যে আন্তর্জাতিক শক্তি ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তাদের ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।
মন্ত্রী বলেন, ‘যারা স্বাধীনতা চায়নি তারা ইসলামের কথা বলে দেশের লাখ লাখ নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের মধ্যে ২৯ লাখ বা তার বেশি মানুষ মুসলমান। ইসলাম রক্ষার কথা বলে তারা এদেশের যে নারীদের পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদেরকে ‘গণিমতের মাল’ বলে ফতোয়া দিয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ নেয়ায় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। অথচ এদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে।’
বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষেরা বাগদাদ থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন, ইসলামি দেশগুলোর সংস্থা ওআইসি’র সদস্য হয়েছিলেন এবং দাবি তুলেছিলেন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দিতে হবে। আর তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ইসলামের জন্য অভূতপূর্ব অবদান রেখে চলেছেন। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি অন্য কেউ দেয়নি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য কেউ প্রতিষ্ঠা করেনি, জেলা-উপজেলায় মসজিদ-মক্তব নির্মাণ করে ইমাম, প্রশিক্ষকদের বেতন-ভাতা অন্য কেউ দেয়নি, বঙ্গবন্ধুকন্যা ও তাঁর সরকার দিয়েছে।’
দেশে প্রায় এক লাখ মসজিদভিত্তিক মক্তব প্রতিষ্ঠা, মক্তবপ্রতি শিক্ষককে মাসে পাঁচ হাজার দুইশত টাকা ভাতা দেয়া, পাশাপাশি বিশ হাজার দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে বারো হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা দেয়া শেখ হাসিনা নিজ উদ্যোগে চালু করেছেন, জানান তথ্যমন্ত্রী। সেকারণে বিএনপি-জামাত যারা শুধু নির্বাচন এলে মধুর মধুর কথা বলে কিন্তু ইসলামের জন্য কোনো কাজ করে না, তাদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
ইউনাইটেড ইসলামি পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা মোঃ ইসমাইল হোসাইনের সভাপতিত্বে ওলামাগণ সভায় বক্তব্য দেন।
সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার অভাবেই অধিকাংশ দেওয়ানি মামলার সৃষ্টি : আইনমন্ত্রী
ঢাকা, ৫ ভাদ্র (২০ আগস্ট) :
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার অভাবেই দেশের আদালতগুলোতে বড় আকারের মামলাজট তৈরি হয়েছে। কারণ দেশের অধিকাংশ দেওয়ানি মামলার সৃষ্টি হয় সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনার অভাবে। আবার ফৌজদারি মামলারও অন্যতম কারণ ভূমি বিরোধ।
আজ রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের বিচারকদের ৪৫ ও ৪৬তম বিশেষ বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী বিচারকগণের জন্য আয়োজিত ‘ভূমি জরিপ সংক্রান্ত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ হওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথাপিছু জমির পরিমাণ এবং আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য খাদ্যের নিশ্চয়তা ও আবাসনসহ উন্নত জীবনযাত্রার জন্য আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আধুনিক ভূমি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অনুধাবন করেই সরকার ‘ই-রেজিস্ট্রেশন’ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া ইতোমধ্যেই কিছু কিছু জেলায় ই-রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ভূমি অফিসের ই-মিউটেশনের আন্তসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন এবং মিউটেশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন হবে বলে তিনি মনে করেন।
আনিসুল হক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানেই সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন এবং সমাজে সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিতের যে অংগীকার করেছিলেন বিচার বিভাগের উন্নয়নের মাধ্যমে তারই বাস্তবায়ন করে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। দ্রুততম সময়ে, কম খরচে ও কম ভোগান্তিতে জনগণের দোরগোড়ায় ন্যায়বিচার পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রমকে সফল করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, নান্দনিক চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ, বিচারক ও আইনজীবীদের একাডেমিক প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার লক্ষ্যে ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ, আইটি বেইসড ডিজিটাল বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারিক পদসৃজন এবং অসহায় মানুষের জন্য কার্যকর আইন সহায়তা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে সহজে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা করে কিছু আইন ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে এবং দেওয়ানি কার্যবিধিসহ আরো কিছু আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একটি ফলপ্রসূ ও জনবান্ধব বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই সরকার এসব পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বক্তৃতা করেন।
নারীকে বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয় : প্রতিমন্ত্রী ইন্দিরা
ঢাকা, ৫ ভাদ্র (২০ আগস্ট) :
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, নারীরা কখন বিয়ে করবে, কাকে বিয়ে করবে, কখন গর্ভধারণ করবে এগুলো সম্পূর্ণ ওই নারী সিদ্ধান্ত নিবে এবং এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার তার অধিকার আছে। নারীর অধিকার মানবাধিকার।
প্রতিমন্ত্রী আজ ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইউএসএআইডি উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্পের আওতায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজ, এনজিও ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দকে অবহিতকরণ এবং ১০ লাখ মানুষের গণস্বাক্ষর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের অনেক অঞ্চলে নারীরা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত। যে দেশে অর্ধেক নারী সে দেশে নারীকে বাদ দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ২০৪১ সাল নাগাদ কর্মস্থলে নারীর কর্মসংস্থান ফিফটি-ফিফটি উন্নীত করার অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো ঘোষণা দেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার শূন্যতে নিয়ে আসবেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, নারীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতির পিতা সর্বপ্রথম নারীদের গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন, নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
ইউএসএআইডি উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্প মা, নবজাতক ও শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি এবং যক্ষ্মা বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজের একটি সমন্বিত প্রয়াস। এলক্ষ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দেশব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধিতে উজ্জীবন প্রকল্পের আওতায় ১০ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন পেশা ও বয়সের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডির ডেপুটি পরিচালক মিরান্ডা বেকম্যান; মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন স্টিভেনস; সেলিমা আহমাদ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএসএআইডির উজ্জীবন প্রকল্পের প্রধান ড. ফয়সাল মাহমুদ।